আমরা প্রায়ই টিভিতে, অনলাইন পোর্টালে বা সংবাদপত্রে এরকম খবর দেখি যে, পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকা। কিন্তু ঢাকা কি আসলেই সবচেয়ে দূষিত শহর?

বিশ্বকোষের আজকের পর্বে আমরা বাংলাদেশের বায়ু দূষণ ও AQI সম্পর্কে জানবো | আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে সাবস্ক্রাইব করুন।

পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহর ঢাকা, তবে কথা হচ্ছে এই তথ্যগুলো স্বল্প সময়ের জন্য সত্য। এই তথ্যের স্থায়িত্ব কম। AQI প্রতিনয়ত পরিবর্তন হয় কারণ বায়ু কখনো স্থির থাকে না। যদি কোথাও দেখেন যে ঢাকা সবচেয়ে দূষিত শহর। তবে বুঝবেন সেটা শুধুমাত্র ঐ দিনের জন্য। পুরো মাস বা বছরের জন্য নয়। অর্থ্যাৎ প্রতিদিন AQI মানের পরিবর্তন ঘটে আর প্রতিদিনই দূষিত শহরের তালিকারও পরিবর্তন ঘটে। এজন্য একদিন শুনবেন ঢাকা, একদিন দিল্লী আবার একদিন করাচী।

গত ২০শে নভেম্বর ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। সে সময় ঢাকার AQI মান ছিল ১৯৩ আর পাকিস্তানের লাহোরের ছিল ১৭১। তবে ঢাকা সবসময়ই প্রথম দশটি দূষিত শহরের মধ্যেই থাকে। প্রথমে খুব কমই আসে।

আপনি চাইলে যেকোন সময় যেকোন শহরের AQI মান দেখতে পারেন। অনলাইনে রিয়েল টাইম AQI মান দেখার সুযোগ রয়েছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত শহরের অধিকাংশ অবস্থিত ভারতে আর চায়নাতে। প্রথম ৫০টি দূষিত শহরের প্রায় ৪০টি ভারত আর চায়নাতে অবস্থিত। এই ৫০টির মধ্যে বাংলাদেশের ৪ টি রয়েছে। এরা হল ঢাকা, বরিশাল, গাজীপুর আর খুলনা। পাকিস্তানের রয়েছে করাচী ও লাহোর। একটি জিনিস হয়তো খেয়াল করেছেন, বায়ু দূষণের সাথে জনসংখ্যার একটি গভীর যোগাযোগ রয়েছে। যে দুটি দেশে দূষিত শহর সবচেয়ে বেশি সে দুটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দুটি দেশ। আর বাংলাদেশও জনসনংখ্যার ঘনত্বের দিক থেকে এক নম্বরে।

এবার জানাজাক কিভাবে এই বায়ু দূষণ মাপা হয়।

AQI একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য প্রতিদিনকার বায়ুর কোয়ালিটি বা গুণাগুণ পরিমাপ করে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আজকের বায়ু কতটা স্বাস্থ্যসম্মত আর কতটা ক্ষতিকর। আর এটা আমাদের স্বাস্থ্যে কি ধরণের প্রভাব ফেলবে সেটাও জানিয়ে দেয়। AQI আমাদের যেই রিপোর্ট দেয় তা আমাদের জানান দেয় যে, সামনের কয়েক ঘন্টায় আমরা কি ধরণের পরিবেশের সম্মুখীন হব।

AQI পরিমাপ করা হয় পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন পাঁচটি এলিমেন্ট বা উপাদানের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে। উপাদান পাঁচটি হলঃ

গ্রাউন্ড লেভেলের ওজোনের পরিমাণ
পার্টিকেল পলিউশন
কার্বন মনো-অক্সাইড
সালফার ডাই-অক্সাইড
নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড   
এদের মধ্যে প্রথম দুটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। এরাই মানব জীবনের জন্য প্রধানত হুমকি সরূপ। ১-৫০০ স্কেলের মধ্যে AQI পরিমাপ করা হয়। AQI এর মান কত হলে সেটা পরিবেশের জন্য ভালো আর কত হলে খারাপ সেটাও নির্ধারণ করা হয়েছে। AQI  পরিমাপের জন্য প্রথমে মাটিতে ও মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট থেকে দরকারী ডেটা বা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তারপর সেগুলোকে কম্বাইন্ড বা একীভূত করে এটিকে AQI স্কেল ভেল্যুতে নিয়ে আসা হয়। এভাবে প্রতিদিনই পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি শহরের AQI মান নির্ণয় করে তা আপডেট করা হয়।

বায়ু দূষণে সাউথ এশিয়ার দেশগুলোই এগিয়ে। আমাদের অবস্থাও ভালো না। বাংলাদেশে  ২০১৭ সালে ১ লক্ষ ২৩ হাজার মানুষ বায়ু দূষণের কারণে মারা যায়। বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী যদি আমাদের দেশের বায়ু গুণগত মান স্বাস্থ্যকর হত তবে গড়ে প্রত্যেক ব্যক্তির আয়ু ১.৩ বছর বেড়ে যেত। তাই বায়ু দূষণকে সাইলেন্ট কিলার হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ৩.৬ বিলিয়ন অর্থ্যাৎ পৃথিবীর ৪৭ শতাংশ মানুষ হাউজহোল্ড এয়ার পলিউশনের শিকার। এর উৎস হচ্ছে ঘরবাড়ির ময়লা ও রান্নার ধোঁয়া। ঘড়বাড়ি অপরিষ্কার থাকলে এমনটা হয়।