বর্তমান বিশ্বে ময়লা অনেক বড় একটি সমস্যা। আমাদের প্রতিদিনের কাজকর্মে প্রচুর ময়লা আবর্জনা তৈরি হয়। যা আমাদের পরিবেশকে নষ্ট করছে। তবে এই সমস্যার কি কোনো সমাধান নেই? কেন এসব ময়লা আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেই না? এর পেছনে অনেক কারণ রয়েছে।

বিশ্বকোষের আজকের পর্বে আমরা এসব কারণ নিয়ে আলোচনা করবো | আপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে সাবস্ক্রাইব করুন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে আমেরিকায় একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪ পাউন্ড ময়লা তৈরি করে এবং হিসেব করলে দেখা যায় আমেরিকা থেকে এক বছরে তৈরি আবর্জনার পরিমাণ ২৫৪.১ মিলিয়ন পাউন্ড! নিশ্চিতভাবে এই বিশাল পরিমাণ ময়লা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সেজন্য এই ময়লাকে রিসাইকেল করা হয়। কিন্তু সম্পূর্ণটাই রিসাইকেল করা সম্ভব হয়ে উঠে না। অতিরিক্ত তাপ-চাপে এইসব ময়লাকে নষ্ট করে ফেলতে হয়। বর্তমানে এভাবেই মূলত ময়লার এই সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে।

আমরা কেন আমাদের এই ময়লাগুলোকে আগ্নেয়গিরির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি না! আমরা সবাই হয়তো জানি যে আগ্নেয়গিরি হল এমন একটা উৎস বা পাহাড় যেখানে পৃথিবীর অভ্যন্তরের লাভা সরাসরি পৃথিবী পৃষ্ঠে উঠে আসে। এই লাভা মূলত গলিত পাথর আর খনিজের মিশ্রণ। অনেক যায়গায় ‘লাভা লেক’ রয়েছে যেখানে এই গলিত লাভা পুকুরের পানির মত থাকে এবং উপরে নিচে উঠতে থাকে। ফলে এখানে ময়লা ফেলে দিলে প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের আবর্জনাগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যাবে এবং উচ্চ চাপে গলে যাবে। কিন্তু এত সহজ সমাধান কেন আমরা একে ব্যবহার করছি না?

১) আগ্নেয়গিরি আকৃতি সমস্যা: আমরা অনেকেই হয়তো কল্পনা করি যে আগ্নেয়গিরি হবে একটা সুন্দর পাহাড়ের মত। এই পাহাড়ের চুড়ায় একটা কূপের মতো থাকবে যেখান দিয়ে সুন্দর করে ময়লা ফেলে দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন না। আগ্নেয়গিরির লাভাগুলো পাহাড়ের বা ভূ-পৃষ্ঠের ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকে। ফলে সেখানে কোন ময়লা ফেলে সম্ভব না। কারণ এই ময়লা ফেললে তা লাভার সাথে সাগর বা ভূপৃষ্ঠে গিয়েই জমা হবে।

২) লাভা লেক: আগ্নেয়গিরিগুলো অনেকসময় লাভা লেকের মত হয়। অর্থাৎ বিশাল যায়গা জুড়ে লাভাগুলো গরম পানির মত ফুটতে থাকে। সেখানে আমরা সরাসরি ময়লা ফেলে দিতে পারি। কিন্তু এতে একটা বিরাট সমস্যা আছে। এরকম একটা পরীক্ষা ২০০২ সালের দিকে করা হয়েছিল। একদল লোক কিছু ময়লা এরকম লাভা লেকে ফেলে দেয় এবং কিছুক্ষণ পরে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। মূলত আপেক্ষিক কম তাপমাত্রার ময়লা বেশি তাপমাত্রা লাভার সাথে মিশে গিয়ে এই বিস্ফোরণ ঘটায়।

৩) পরিবহন সমস্যা: পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বাস করে জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অনেক দূরে। ফলে এই আবর্জনা এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় নিয়ে যাওয়ার যা খরচ তা অত্যধিক। এর থেকে কম খরচে ময়লার দহন করা সম্ভব। আরেকটা সমস্যা হল যে বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরি খুব বিপদজনক যায়গায় থাকে। সেখানে কোন গাড়ি পৌছাতে পারে না। সেক্ষেত্রে ময়লা ফেলতে হলে বিমান বা হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে হবে। এখানে মূলত খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যায়।

৪) পরিবেশ দূষণ সমস্যা: আমরা যদি আবর্জনাগুলো সরাসরি আগ্নেয়গিরিতে ফেলে দেই তাহলে কিছু ময়লা হয়তো লাভার সাথে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে চলে যাবে কিন্তু বেশিরভাগই লাভা পৃষ্ঠে দহন হবে যা থেকে প্রচুর বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হতে পারে। এইসব গ্যাস পরিবেশের জন্য অবশ্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। বরং আমরা বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বদ্ধ যায়গায় ময়লার দহন করতে পারি এবং ফিল্টার করে এই দূষিত গ্যাস বাতাসের সাথে মেশা থেকে রোধ করতে পারি।