আপনি হয়তো এতদিনে ফেসবুকে, ইন্টারনেটের বিভিন্ন জায়গায় এবং নিউজপেপারে অবশ্যই পার্সেভারেন্স রোভারের নাম শুনেছেন যা বর্তমানে মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে বিচরন করছে। চলতি মাসের গত ১৮ তারিখে নাসার তৈরি রোভার মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে সফলভাবে ল্যান্ড করেছে। আপনারা হয়তো অলরেডি জানেন যে, মঙ্গল গ্রহে এর আগেও নাসা তিনটি রোভার পাঠিয়েছিলো যার একটির নাম দেওয়া হয়েছিলো কিউরিয়োসিটি, আরেকটির নাম দেওয়া হয়েছিলো অপরচুনিটি এবং আরেকটি ছিলো স্টেশনারি ইনসাইট ল্যান্ডার। দুর্ভাগ্যবশত ২০১৮ সালে অপরচুনিটি রোভারটি অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও ২০১২ সালে পাঠানো কিউরিয়োসিটি রোভারটি এখনো মঙ্গলের মাটিতে বিচরন করছে।
গত বছরের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করে নাসার মার্স মিশনের তৃতীয় রোভার, পার্সেভারেন্স। দীর্ঘ ৭ মাস ভ্রমনের পরে পারসেভারেন্সের যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। তবে পার্সেভারেন্স রোভারটি অনেকদিক থেকেই আগের দুটি রোভারের তুলনায় অনেকটা আলাদা এবং অ্যাডভান্সড। পার্সেভারেন্স মুলত যে উদ্দেশ্য নিয়ে মঙ্গলে যাত্রা করেছে, সেই উদ্দেশ্যটাও আগের দুটি রোভার থেকে কিছুটা আলাদা। যদি আপনার কসমোলজি এবং বিশেষ করে নাসার এই মার্স মিশন নিয়ে ইন্টারেস্ট থাকে, তাহলে চলুন আজ জানা যাক নাসার পার্সেভারেন্স রোভারের ব্যাপারে!
পার্সেভারেন্স রোভারটি আনুষ্ঠানিকভাবে মঙ্গলগ্রহের মাটিতে পা রেখেছে ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখে। নাসার ভাষ্যমতে, এই ল্যান্ডিং প্রোসেসটাই ছিলো এই রোভারটির এবং এই প্রোজেক্টের সাথে যারা যারা যুক্ত ছিলেন তাদের সবার জন্য সবথেকে চ্যালেঞ্জিং মোমেন্ট। পার্সেভারেন্স ল্যান্ড করার সময় ধারন করা ল্যান্ডিং ভিডিওটি কয়েকদিন পরেই নাসা ইন্টারনেটে রিলিজ করেছে। আপনি চাইলে পার্সেভারেন্স ল্যান্ডিং এর এই ভিডিও নিজেই দেখতে পারবেন। ভিডিওটি এখনও না দেখে থাকলে এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
ল্যান্ডিং এর পরপরই ছয় চাকার তৈরি এই রোভারটি মঙ্গলগ্রহের চারদিকের পরিবেশের কিছু ল্যান্ডসকেপ স্টিল ইমেজ ক্যাপচার করেছে এবং মঙ্গলগ্রহের বাতাসের শব্দও রেকর্ড করেছে এর বিল্ট-ইন মাইক্রোফোন ব্যাবহার করে। অবশ্যই পার্সেভারেন্স এই স্টিল ইমেজ এবং বাতাসের শব্দ ক্যাপচার করে বসে থাকেনি, সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব পৃথিবীর মানুষের কাছে পাঠিয়েছে। যদিও ল্যান্ডিং এর ভিডিওর পাশাপাশি একইসাথে সাউন্ড পাঠানো সম্ভব হয়নি, তবে সাউন্ডের অডিও আলাদাভাবে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। আপনি হয়তো এতদিনে পার্সেভারেন্সের রেকর্ড করা মঙ্গলগ্রহের বাতাসের শব্দ শুনেও ফেলেছেন। যদি এখনো পর্যন্ত মঙ্গলগ্রহের শব্দ না শুনে থাকেন, তাহলে নিচের ভিডিওটি থেকে শুনে নিন!
পার্সেভারেন্স রোভারের স্ট্রাকচার
মঙ্গলগ্রহে পার্সেভারেন্সের এরপরের মিশন এবং উদ্দেশ্য জানার আগে প্রথমত পার্সেভারেন্স রোভারটার স্ট্রাকচার নিয়েই জানা যাক। ২০১২ সালে মঙ্গলগ্রহে পাঠানো রোভার, কিউরিয়োসিটিকে যদি আপনি ইন্টারনেটে বা টিভিতে কোথাও দেখে থাকেন, তাহলে আপনার কাছে পার্সেভারেন্স রোভারটিও ফ্যামিলিয়ার মনে হবে। বাইরের দিকের স্ট্রাকচারের দিক থেকে কিউরিয়োসিটি, অপরচুনিটি এবং পার্সেভারেন্সের মধ্যে তেমন কোন মেজর ডিফারেন্স দেখতে পাবেন না। তবে কিউরিয়োসিটি লঞ্চ করা হয়েছিলো প্রায় ৯ বছর আগে। এই ৯ বছরে পৃথিবীতে টেকনোলোজির অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। তাই পার্সেভারেন্সে আরও বেটার টেকনোলজি এবং আর অ্যাডভান্সড ফিচারস এবং ইকুইপমেন্টস থাকবে এটাই স্বাভাবিক। একেবারে যদি বেসিক কিছু কনফিগারেশন জানতে চান, তাহলে নিচের চার্টটি দেখুন।
প্রস্থঃ ১০ ফিট (৩ মিটার)
ওজনঃ ১০,২৫ কিলোগ্রাম
চাকার সংখ্যাঃ ৬ টি অ্যালুমিনিয়াম হুইল, যাতে আছে টাইটানিয়ামের তৈরি স্পোকস
টপ স্পিডঃ ১৫২ মিটার/ঘণ্টা
সায়েন্স ইন্সট্রুমেন্টস
অবশ্যই, রেড প্ল্যানেটকে এক্সপ্লোর করার জন্য তো শুধুমাত্র গিয়ে চারদিকের ল্যান্ডসকেপ ছবি তুলে আর সাউন্ড রেকর্ড করে পৃথিবীতে পাঠালেই হবে না। মঙ্গলগ্রহকে রিসার্চ করার জন্য আরও অনেক অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক টুলস এবং ফিচারসের দরকার হবে। পার্সেভারেন্সকে মঙ্গলগ্রহে যে মিশনের জন্য পাঠানো হয়েছে সেই মিশন সফলভাবে কমপ্লিট করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভান্সড টুলস ব্যাবহার করার দরকার পড়বে রোভারটির। যদিও পার্সেভারেন্সে এমন অসংখ্য টুলস আছে, সবগুলো নিয়ে যেহেতু আলোচনা করা সম্ভব না, তাই কয়েকটি হাইলাইটেড টুলস এবং সেগুলোর কাজের ব্যাপারে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। নিচের ইমেজটি লক্ষ্য করুন।
# মাস্টারক্যাম-জি (Mastercam-Z)
রোভারটির একেবারে মাথার ওপরে যে ভিডিও ক্যামেরার মতো জিনিসটি মাউন্ট করা দেখতে পাচ্ছেন, এটাই হচ্ছে মাস্টারক্যাম-জি। এই মাস্টারক্যামটিকেই বলতে পারেন পার্সেভারেন্স রোভারটির চোখ। নাসার ভাষ্যমতে, এই মাস্টারক্যামটি একটি হাইলি অ্যাডভান্সড ক্যামেরা মডিউল, যার কাজ হচ্ছে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠের এবং চারদিকের পরিবেশের হাই ডেফিনেশন ভিডিও, প্যানরমিক কালার এবং মঙ্গলের সার্ফেসের অ্যাকিউরেট থ্রিডি ইমেজ বা মডেল তৈরি করা। অনেক দূরের টার্গেট জুম করে কাছ থেকে দেখার জন্য এটিতে একটি পাওয়ারফুল জুম লেন্সও যোগ করা হয়েছে।
# মক্সি (Moxie)
এটা একটা ইউনিক ইন্সট্রুমেন্ট। এই টুলটি ব্যাবহার করেই মুলত পার্সেভারেন্স ভবিষ্যতে মানুষকে মঙ্গলগ্রহে পা রাখার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছে। এই মডিউলটি মঙ্গলগ্রহের অ্যাটমোসফিয়ারে থাকা কার্বন-ডায়-অক্সাইড ব্যাবহার করে সেটি থেকে অক্সিজেন জেনারেট করতে পারে। এর ফলে ভবিষ্যতে কোন মানুষ মঙ্গলগ্রহে ভ্রমন করলে তার নিশ্বাস নেওয়ার একটা ব্যাবস্থা হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই টুল ব্যাবহার করে পর্যাপ্ত পরিমান অক্সিজেন জেনারেট করা সম্ভব হলে তা মঙ্গলের মাটিতেই রকেট ফুয়েল তৈরির কাজে ব্যাবহার করা যেতে পারে, যার ফলে মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাওয়ার পড়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। তবে এটি এখনো শুধুই একটি এক্সপেরিমেন্টের পর্যায়ে আছে।
# সুপারক্যাম (Supercam)
ক্যামেরা, লেজার এবং স্পেক্ট্রোমিটারকে একসাথে করে তৈরি করা হয় পার্সেভারেন্সের সুপারক্যাম। মঙ্গলগ্রহে অর্গানিক কম্পাউন্ড খোঁজার কাজে ব্যাবহার করা হবে সুপারক্যাম। বুঝতে অসুবিধা হলে জেনে রাখুন, এটা ব্যাবহার করা হবে মঙ্গলগ্রহে পূর্বে কোন মাইক্রোবায়াল লাইফের অস্তিত্ব ছিলো কিনা এবং এখনো আছে কিনা বা এমন কোন সাইন পাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারে রিসার্চ করার কাজে। এই সুপারক্যামটি প্রায় ৭ মিটার দূর থেকে এমনকি পেন্সিলের পয়েন্টের সমান ঘনত্বের কেমিক্যাল এবং মিনারেল মেকাপকে আইডেন্টিফাই করতে সক্ষম।
# শেরলক (SHERLOC)
না, এখানে ডিটেক্টিভ শেরলক হোলমসের কথা বলা হচ্ছেনা। পার্সেভারেন্সের আরেকটি টুল, SHERLOC এর সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে, Scanning Habitable Environments with Raman & Luminescence for Organics & Chemicals, যদিও আপনি এই নামটা পুরোটা পড়েন নি। এত অলস হলে কিভাবে চলবে? যাইহোক, কাজের কথায় আসি। এই টুলটি মুলত একটি আল্ট্রাভায়োলেট স্পেকট্রোমিটার, যেটিও মুলত ব্যাবহার করা হবে মঙ্গলগ্রহে পাণের অস্তিত্ব আছে কিনা তা রিসার্চ করার কাজে। এই মডিউলটি এবং এর ভেতরে থাকা Watson নিকনেমের ক্যামেরাটি মঙ্গলগ্রহের সার্ফেসের মাইক্রোস্কোপিক ইমেজ ক্যাপচার করতে এবং অ্যানালাইজ করতে সক্ষম। এটিতে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজারও আছে যা টার্গেটে পয়েন্ট করা হবে এবং টার্গেটে উপস্থিত থাকা কেমিক্যালকে অ্যানালাইজ করবে, যে প্রোসেসটিকে বলা হয় স্পেক্ট্রোসকোপি।
মিনি হেলিকপ্টার
নাসার পার্সেভারেন্স মিশনের সাথে যারা যুক্ত ছিলেন, তারা এবার চিন্তা করেছেন যে মঙ্গলগ্রহে এবার রোভার পাশাপাশি একটা মিনি হেলিকপ্টার পাঠালে খারাপ হয়না, তাই হোয়াই নট? তাই যেই ভাবা সেই কাজ। নাসা পার্সেভারেন্সের সাথে পাঠিয়ে দেয় একটি হাইলি অ্যাডভান্সড মিনি হেলিকপ্টার, বা বলতে পারেন পার্সেভারেন্সের বাচ্চা। যাইহোক, এই মিনি হেলিকপ্টারটার নামটাও বেশ অদ্ভুত। এটির নাম দেওয়া হয়েছে ইনজেনুইটি (Ingenuity)। এই হেলিকপ্টারটিও পার্সেভারেন্সের সাথেই থাকবে, তবে যখন ইচ্ছা রোভার থেকে আলাদা হয়ে ইন্ডেপেন্ডেন্ট ভাবে চলাচলও করতে পারে, কারণ, অবশ্যই, এটা একটা হেলিকপ্টার!
এই মিনি হেলিকপ্টারটিকে স্পেশালি ডিজাইন করা হয়েছে যাতে মঙ্গলগ্রহের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে এটা সহজেই চলাচল করতে পারে এবং ইনফরমেশন কালেক্ট করতে পারে। তবে হ্যাঁ, এই হেলিকপ্টারটিও জাস্ট একটা এক্সপেরিমেন্ট। এটা একটা হাই রিস্ক হাই গেইন চ্যালেঞ্জ। মিশনের প্রথম কয়েক মাস এই হেলিকপ্টারটি পার্সেভারেন্সের সাথেই থাকবে। তবে নাসা এটিকে আলাদাভাবে ডিপ্লয় করার মতো উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেলেই এটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। উপযুক্ত জায়গা পেলে পার্সেভারেন্স এই হেলিকপ্টারটিকে মঙ্গলগ্রহের সার্ফেসে ছেড়ে দেবে এবং নিজের মতো চলে যাবে।
এরপর থেকে এই হেলিকপ্টারটিকে আলাদাভাবে অন্যান্য রিসার্চের কাজে ব্যাবহার করা হবে। মঙ্গলগ্রহে এমন অনেক জায়গা আছে এবং আরও অনেক জায়গা থাকতে পারে যেখানে চাকাযুক্ত রোভার দ্বারা রিসার্চ করানো বেশ ঝুঁকির কাজ হয়ে দাঁড়াবে। এমন সব জায়গায় এই পোর্টেবল হেলিকপ্টারটি ব্যাবহার করে রিসার্চের কাজ বহাল রাখা সম্ভব হতে পারে। মুলত এই কারণেই নাসা সিদ্ধান্ত নিয়েছে মঙ্গলের পৃষ্ঠে হেলিকপ্টার পাঠানোর।
নেক্সট প্ল্যান
যেমনটা অলরেডি জেনে গিয়েছেন, পার্সেভারেন্স শুধুমাত্র মঙ্গল গ্রহের ইমেজ ক্যাপচার করা ছাড়াও আরও অনেক কিছুই করবে। যদিও পার্সেভারেন্সের সম্পূর্ণ মিশনের অবজেক্টিভসের লিস্ট অনেক লম্বা, তবে মেইন কয়েকটি অবজেক্টিভ হচ্ছে-
- প্রাচীন মাইক্রোবায়াল লাইফের সাইনের খোঁজ করা
- মঙ্গলগ্রহের পাথর এবং মাটির স্যাম্পল সংগ্রহ করা যাতে সেগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়
- এক্সপেরিমেন্টার হেলিকপ্টারটি পরিচালনা করা
- মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া এবং জিয়োলজি নিয়ে স্টাডি করা
- ফিউচার মার্স মিশনগুলোর পরিকল্পনা করা
- মঙ্গলগ্রহে কার্বনডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন জেনারেট করার এক্সপেরিমেন্ট করা
নাসার পরিকল্পনা অনুযায়ী এই মিশনটি মঙ্গলগ্রহের সম্পূর্ণ ১ বছর সময় ধরে চলবে, যা পৃথিবীর হিসাবে প্রায় ২ বছরের সমান। তবে খুব সম্ভবত কিউরিয়োসিটি রোভারের মতোই নাসা এই মিশনটিকেও আরও বেশ কয়েক বছরের জন্য এক্সটেন্ড করতে পারে, যদি তারা ২ বছরের মধ্যে সব অবজেক্টিভস কমপ্লিট করতে না পারে। যারা নাসার আরেকটি রোভার, অপরচুনিটির ব্যাপারে জানেন, তারা হয়তো জানেন যে অপরচুনিটি রোভারটি মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠেই এখনো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এর কারণ হচ্ছে, এই রোভারটি একটি ধুলার ঝড়ের মুখোমুখি হয়েছিলো এবং এরপরে সূর্যের আলোর অভাবে আর পুনরায় কাজ করতে পারেনি।
তবে নাসার ভাষ্যমতে, এবার পার্সেভারেন্স রোভারের ক্ষেত্রে এমনটা হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ, পার্সেভারেন্স রোভার অপরচুনিটির মতো সূর্যের আলো ব্যাবহার করে পাওয়ার জেনারেট করেনা। বরং, এটি কিউরিয়োসিটির মতোই একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার সোর্স ব্যাবহার করে কাজ করে যার জন্য সূর্যের আলোর কোন দরকার হয়না। তাই বর্তমানে আগের রোভার কিউরিয়োসিটি এবং এই নতুন পার্সেভারেন্স নিয়ে নাসা আগের তুলনায় আরও বেশি আশাবাদী।
আর, এবার মঙ্গলগ্রহে পার্সেভারেন্সের আরেকটি অন্যতম মিশন হবে মঙ্গলপৃষ্ঠের একটা জায়গা এক্সপ্লোর করা, যে জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে জ্যাজেরো ক্রেটার (Jezero Crater)। এই জায়গাটিতে পূর্বে একটি নদীর অবস্থান থাকার সাইন পাওয়া গিয়েছে। যেহেতু আগে পানির অস্তিত্ব থাকার সাইন পাওয়া গিয়েছে, তাই মঙ্গলগ্রহে আগে এই স্থানে কোন মাইক্রোবায়াল লাইফ ছিলো কিনা বা কোন প্রাণের অস্তিত্ব ছিলো কিনা তা রিসার্চ করা পার্সেভারেন্সের একটি মেইন অবজেক্টিভ।
মঙ্গলের পৃষ্ঠে সবার নাম পৌঁছে দেওয়া
নাসা অনেকদিন ধরেই একটি ফ্রি ক্যামপ্লেইন পরিচালনা করেছিলো, যেখানে যেকেউ এই ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়ে তাদের নিজের নাম মঙ্গলের মাটিতে পাঠানোর জন্য সাবমিট করতে পারতেন। আমি নিজেও অংশ নিয়েছিলাম এই ক্যাম্পেইনে। হ্যাঁ, এটাই পারসেভারেন্সের আরেকটা মেইন অবজেক্টিভ। যারা অনেকদিন ধরে নাসার ওয়েবসাইটে গিয়ে ফ্রিতে নিজেদের নাম সাবমিট করেছেন মঙ্গলগ্রহে পাঠানোর জন্য, তাদের সবার নামই পার্সেভারেন্সের সাথে মঙ্গলের পৃষ্ঠে পাঠানো হয়েছে। প্রায় ১১ মিলিয়ন মানুষ এই ক্যামপ্লেইনে অংশ নিয়ে নিজেদের নাম সাবমিট করেছিলেন এবং এই ১১ মিলিয়ন মানুষের নামই পার্সেভারেন্স পৌঁছে দিয়েছে মঙ্গলগ্রহের পৃষ্ঠে।
ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের নাম একেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিলিকন চিপসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে পার্সেভারেন্সের সাথে। এই চিপসগুলোকে একটি অ্যালুমিনিয়াম প্লেটের সাহায্যে বসানো হয়েছে পার্সেভারেন্সের বডিতে। এই প্লেটে আরও দেওয়া হয়েছে আমাদের পৃথিবীম সূর্য এবং মঙ্গলগ্রহের একটি ইলাস্ট্রেশন, যেখানে আঁকানো সূর্যের রশ্মিতে মর্স কোড ব্যাবহার করে একটি হিডেন মেসেজ লেখা আছে Explore as One। অর্থাৎ, পারসেভারেন্স একা নয়, আমরা সবাই একসাথেই এক্সপ্লোর করছি দ্যা রেড প্ল্যানেট।
এছাড়াও পার্সেভারেন্সের বডিতে আরও একটি আলাদা অ্যালুমিনিয়াম প্লেট বসানো হয়েছে, যেখানে পৃথিবীর সকল হেলথ কেয়ার ওয়ার্কারদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, যারা ২০২০ সালে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনাভাইরাস এবং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা করেছেন। পার্সেভারেন্স রোভারটি নাসার কাছে শুধুই একটি রোবট গাড়ি বা একটি রিসার্চ করার যন্ত্র নয়, এটি নাসার কাছে নিজেদের অক্লান্ত পরিশ্রমের এবং মানবজাতির হাজার বছর ধরে তৈরি হওয়া অজানাকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষার একটি নিদর্শন।
0 Comments