পৃথিবীর
সব প্রান্তে সব মানুষকে একই রকম ইন্টারনেট সেবা প্রদানের জন্য স্টার্লিংক কাজ
করছে। বাংলাদেশের
ইন্টারনেট এবং নিউয়র্ক এর ইন্টারনেট এর মধ্যে আছে অনেক পার্থক্য। যেমন স্পিড,
পিং, কানেকশন সহ আরো অনেক সমস্যা। আবার
একটি শহরের ইন্টারনেট বেবস্থা থেকে পাহাড়ি বা গ্রাম অঞ্চলের ইন্টারনেট বেবস্থা
অনেক আলাদা। এই সকল সমস্যার সমাধানের জন্য ভবিষতের ইন্টারনেট হিসেবে তৈরী করা
হচ্ছে স্টারলিংক। যা পৃথিবীর বাইরের স্যাটেলাইটের মাদ্ধমে পরিচালনা করা হবে।
বিশ্বকোষের
আজকের ভিডিওতে আমরা এই ভবিষতের ইন্টারনেট বা স্টার্লিংকে নিয়ে জানবো।
স্যাটেলাইট
বলতে আমরা সাধারণত জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটকে বুঝে থাকি। এ ধরনের স্যাটেলাইটগুলো
পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫,৮০০ কিলোমিটার উপরে স্থির থেকে
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
বর্তমানে
এসব জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই অনেক কোম্পানি স্যাটেলাইট ইন্টারনেট
সেবা প্রদান করছে। তবে এগুলোর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। অপরদিকে, লো-অরবিট
স্যাটেলাইট হলো এমন একধরনের স্যাটেলাইট, যেগুলো
জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটের মতো অত উপরে না থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠের অনেকটা কাছাকাছি
থাকে, এবং এই স্যাটেলাইটগুলো একটা জায়গায় স্থির না থেকে
অনবরত দ্রুতগতিতে স্থান পরিবর্তন করে। স্টারলিংক বা এর মতো প্রজেক্টগুলোর জন্য এই
লো-অরবিট স্যাটেলাইটই ব্যবহার করা হবে। লো-অরবিট স্যাটেলাইট ব্যবহারের কারণে
জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইটের সমস্ত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে একে ভবিষ্যতের
ব্রডব্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবে।
বর্তমানে
লো-আরবিট স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড কানেক্টিভিটির লক্ষ্যে অনেকগুলো প্রজেক্ট এর কাজ
চলছে, যেমন -
SpaceX এর প্রজেক্ট StarLink
Amazon এর প্রজেক্ট Kuiper
তবে আজকে
আমরা কথা বলবো বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা টেক-আইকন এলন মাস্কের 'প্রজেক্ট
স্টারলিংক' নিয়ে।
স্টারলিংকের
উদ্দেশ্য হলো, বিশ্বব্যাপী লো-কস্ট হাই-স্পিড ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট সেবা প্রদান নিশ্চিত করা।
ইতোমধ্যে
আমাদের বিশ্বব্যাপী ফাইবার-অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক আছে। এছাড়াও কিছুদিন পর
ফাইভ-জির মতো অ্যাডভান্সড হাই স্পিড মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে আসবে, যার
মাধ্যমে আনলিমিটেড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দেয়াও সম্ভব হবে! তাহলে এই স্টারলিংক এর
দরকারটা কী?
এর দরকার
জানতে হলে আমাদের জানতে হবে ডিজিটাল ডিভাইড সম্পর্কে।
ধরুন, ঢাকা
শহরে ইন্টারনেট যতটা সহজলভ্য এবং সস্তা, পঞ্চগড় শহরে
মোটেই ততটা সহজলভ্য এবং সস্তা নয়। আবার একই এলাকার একজন মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড
ইন্টারনেট হয়তো ডাল-ভাত, কিন্তু অন্য একজনের কাছে সেটা
একরকম বিলাসিতা!
আবার, ব্যাপকভাবে
চিন্তা করে দেখুন, আমেরিকা-চীনে ইন্টারনেট
ইনফ্রাস্ট্রাকচার যেরকম, বাংলাদেশে কিন্তু সেরকম উন্নত,
অ্যাডভান্সড এবং সহজলভ্য নয়।
এসব
কারণেই ইন্টারনেট সর্বজনীন এবং বর্তমান দুনিয়ার অন্যতম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
হওয়া সত্ত্বেও স্থানভেদে মানুষ এর সুবিধাগুলো সমানভাবে নিতে ও এর দ্বারা উপকৃত হতে
পারে না। আর এভাবেই সৃষ্টি হয় 'ডিজিটাল ডিভাইড'।
এখনো
পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অপটিক্যাল
ফাইবার কিংবা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা অত্যন্ত কঠিন, সময়সাপেক্ষ
এবং ব্যয়বহুল একটি কাজ। আর তাই স্টারলিংকের মতো প্রজেক্টগুলো বাস্তুবায়ন করা হচ্ছে
গোটা পৃথিবীব্যাপী সর্বজনীন ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে। যার মাধ্যমে নিউ
ইয়র্কে বসবাস করা একজন মানুষ এবং রাঙামাটির পাহাড়ী এলাকার একজন মানুষ উভয়ই সমান
ইন্টারনেট সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম হবে।
স্টার্লিংকের
প্রজন সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা
করা হয়েছে এই ভিডিও তে।
তাহলে
স্টারলিংক কিভাবে কাজ করবে ?
নেটওয়ার্ক
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্টারলিংক লো-অরবিট স্যাটেলাইট ব্যবহার করবে। লো-অরবিট
স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫০০-১,০০০ কিলোমিটার উপরে থাকে,
যেখানে জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট থাকে ৩৪,০০০ কিলোমিটার উপরে! পৃথিবীপৃষ্ঠের অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থান করার
কারণে এই স্যাটেলাইটগুলো দিয়ে অত্যন্ত দ্রতগতিতে ডেটা আদান-প্রদান করা সম্ভব হয়।
এবং কাছাকাছি অবস্থানের কারনে ল্যাটেন্সিও হয় অনেক কম। আমরা বর্তমানে যে ফাইবার
অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করি, তাতে আলোক-সংকেত ব্যবহার করে
ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারে আলোকে গ্লাস মিডিয়ামের ভেতর
দিয়ে যেতে হয় বলে আলোর গতি প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমে যায়। লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলো
একে অপরের সাথে যোগাযোগ এবং ডেটা আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে লেজার-লাইট ব্যবহার করবে।
যেহেতু এক্ষেত্রে আলোকে গ্লাসের বদলে ভ্যাকিউমের ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তাই আলোর গতি কমে যায় না।
তবে
লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলো অনবরত দ্রুতগতিতে চলার কারণে এদেরকে নির্দিষ্ট একটা
হিসাব-নিকাশ করে সাজানো হয়, যেন এরা একে অপরের সাথে সংঘর্ষ ঘটাতে না পারে।
স্টারলিংক প্রজেক্টে প্রায় ১২,০০০ এর মতো স্যাটেলাইট
ব্যবহার করার কথা।
0 Comments