ডিম আগে না মুরগি আগে? - Which Came First Egg or Chiken?




কোনটি আগে এসেছে, ডিম নাকি মুরগি? এখানে আসলে একটু মাথা খাটানোর দরকার। কারণ, ডিম পাড়ার জন্য আপনার একটি মুরগি লাগবে। আবার অন্যদিকে, মুরগি কিন্তু ডিম থেকেই আসে! সারাদিন তর্ক-বিতর্ক করতে থাকলেও এর কোনও সুরাহা সহজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন এই অসম্ভব ধাঁধারও উত্তর রয়েছে। চমৎকার ব্যাখ্যার মাধ্যমে ঠিকই এর সুরাহা করা যায়।

বিশ্বকোষের আজকের পর্বে আমরা জানবো ডিম আগে না মুরগি আগেআপনি যদি আমাদের চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে সাবস্ক্রাইব করুন।

ডিম বলতে আমরা যা বুঝি তা হল, এটি হচ্ছে পর্দাবৃত এক প্রকার ফাঁকা স্থান, যার মধ্যখানে ভ্রূণের বেঁচে থাকার জন্য জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা তৈরি থাকে। ভ্রূণটি এর মধ্যেই জন্ম নেয় এবং এর মধ্যেই বেড়ে ওঠে।

মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে সর্বপ্রথম প্রাণীদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিবর্তনের ফলেই আজ আমাদের সামনে এমন নানা প্রকারের ডিমের দেখা মিলছে। এসব প্রাণী তাদের প্রজননের জন্যে জলজ পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তারা যেকোনো জলাশয় বা আর্দ্র পরিবেশে ডিম পাড়ত যাতে করে ডিমগুলো শুকিয়ে যেতে না পারে। এদের বলা হয় অ্যামনিওট। আস্তে আস্তে এদের মধ্যে ডিমের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এই ডিমগুলোর ভেতর তিনটি অতিরিক্ত পর্দা বা মেমব্রেন রয়েছে। এই অতিরিক্ত স্তরগুলো ভ্রূণের জীবন ধারণের জন্য সকল ব্যবস্থা থাকে। ভ্রূণ এর মধ্যে জমা থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো ব্যবহার করতে পারে, সৃষ্ট অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ জমা রাখতে পারে, এবং বহিঃজলীয় পরিবেশের অনুপস্থিতিতেও শ্বাসকার্য চালিয়ে যেতে পারে। এর অতিরিক্ত মেমব্রেনসমূহ আরও বড় এবং আরও উন্নত ডিমের বিকাশের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই অ্যামনিওটিক ডিমগুলো স্থলজ পরিবেশে ডিমপাড়ার ক্ষেত্রে এক বিশাল সুযোগের দুনিয়া খুলে দিয়েছিল। কোনও কোনও জায়গায় বলা হয়ে থাকে, সর্বপ্রথম অ্যামনিওট প্রজাতি ৩১২ মিলিয়ন বছর আগে বসবাস করত। আজকের স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ এবং পক্ষীকুল সমস্ত কিছুই সেই প্রথম অ্যামনিওটদেরই উত্তরসূরি।

সর্বপ্রথম যে মুরগির আবির্ভাব পৃথিবীতে ঘটে তা ছিল এক বা একাধিক মিউটেশনের ফসল। এই মিউটেশন ঘটেছিল দুটি প্রায়-মুরগি অথবা আদি মুরগির প্রজননের ফলে সৃষ্ট জাইগোটে। তার মানে, এই আদি-মুরগি দুটির মিলনে যে জাইগোট সৃষ্টি হয়, তার নতুন ডিএনএ বিন্যাসের ফলে সর্বপ্রথম মুরগির সর্বপ্রথম কোষের আবির্ভাব ঘটে। এই সময় প্রথম কোষটিতে মিউটেশন ঘটে, যা অনুলিপিত হয়ে ভ্রূণের বিকাশের সময় অন্যান্য কোষেও স্থানান্তরিত হয়। ফলাফল দাঁড়ায়, জিনগত সত্যিকারের মুরগি! প্রথম দিককার সত্যিকারের মুরগিগুলো দেখতে কেমন ছিল? এর উত্তর হচ্ছে ‘রেড জাঙ্গেল ফাউল’ । এদেরকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভারত, দক্ষিণ চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর-এ দেখতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এই কম হিংস্র এবং অতিপ্রজ ডিমদাতা মুরগিটি এশিয়াতেই সর্বপ্রথম মানুষের দ্বারা গৃহপালিত হয়। ডিএনএ অ্যানালাইসিস এবং গাণিতিক ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে গৃহপালিত মুরগি জাঙ্গল ফাউলেরও আগে থেকেই, প্রায় আটান্ন হাজার বছর আগেই ছিল।

তাহলে এইপর্যন্ত আমরা জানলাম "অ্যামনিওটিক ডিমের আবির্ভাব ঘটে ৩৪০ মিলিয়ন বা তারও আগে এবং প্রথম মুরগির বিকাশ ঘটে ৫৮ হাজার বছর পূর্বে, সেহেতু এটা বলাই নিরাপদ যে ডিমই আগে!"

তাহলে বলাই যায়, ডিম্ আগে !

তবে কিছু বিজ্ঞানী কিন্তু এখনও প্রথমে মুরগির আগমন হয়েছে বলতেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ - ডিমের খোলস ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO3) দিয়ে গঠিত। খোলস তৈরির জন্য প্রথমে ক্যালসিয়ামকে ক্যালসিয়াম কার্বনেট স্ফটিকে পরিণত হতে হয়। এই প্রক্রিয়া চালুর জন্য মুরগি কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, সংক্ষেপে OC-17উক্ত প্রোটিনটি কেবলমাত্র মুরগির ডিম্বাশয়েই পাওয়া যায়। তাহলে, OC-17 ছাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন সম্ভব নয়! সেই যুক্তিতে বলাই যায় যে, মুরগির-ডিম উৎপাদনের জন্য অবশ্যই একটি মুরগিকে আগে জন্ম নিতে হবে!

তাহলে এখন বলা যায়, মুরগি আগে !  দিন শেষে, এই বিষয়টি যুক্তি তর্কের পরস্পরবিরোধী আগ্রাসনে ক্রমশ জটিল হতেই থাকবে।

ডিম অবশ্যই মুরগির আগেই এসেছে। তবে মুরগির ডিম মুরগির আগে আসে নি। একটি ছাড়া আপনি অন্যটি পাবেন না।
সে যাই-ই হোক, যদি যেকোনো একটি পক্ষকে বেছে নিতে বলা হয়, তাহলে বিবর্তনিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি ডিমের পক্ষকেই বেছে নিব। আপনি কোন পক্ষে? নিচের কমেন্টে লিখে জানান।

ভিডিওটি আপনার কেমন লাগলো ? এরকম আরো ভিডিও পেতে আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন। এর পর কি বিষয়ে ভিডিও দেখতে চান আমাদের লিখে জানান। ভিডিওটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ফেসবুকে আমাদের সাথে অ্যাড হতে আমাদের ফেইসবুক পেজ এ লাইক দিন।

বিশ্বকোষে নতুন হলে অন্নান্ন ভিডিও গুলো দেখতে থাকুন।


Post a Comment

0 Comments